শহুরে জীবনে পানীয় হিসেবে কফি বেশ জনপ্রিয়। কফি যেমন শরীর চাঙা করে তোলে। তেমনি বিপরীত ফলাফলও আছে।
কফিতে আছে ক্যাফেইন। ফিমেলফার্স্ট ডটকো ডটইউকে’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা অনুসারে শরীরে খুব বেশি হলে দৈনিক ৪০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন নেওয়া যেতে পারে। তবে কফি ছাড়াও চা, চকলেট ও রঙিন কোমল পানীয়তেও আছে ক্যাফেইন। সারা দিনে কফি ছাড়া এসবও খাওয়া পড়ে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যায়, শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন চলে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দি গ্লেন হাসপাতাল ব্রিসটলের কনসালটেন্ট সার্জন এবং ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞ স্যালি নরটন, ক্যাফেইন গ্রহণের সুবিধা অসুবিধার চিত্র তুলে ধরেন।
খারাপ দিক
হৃদয়ের জন্য ভালো নয়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। বিশেষ করে যখন বেশি দরকার, যেমন: ব্যায়ামের সময়। তাছাড়া বুকধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের জন্যেও শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইন দায়ী।
ঘুমের ব্যাঘাত: এক কথা অনেকেই জানেন, চা বা কফি খেলে ঘুম কম হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করেন তাদের শান্তির ঘুম খুব কমই হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান না তাদের থেকে কফি পানকারীদের ৭৯ মিনিট কম ঘুম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে কফিকে না বলুন।
চিনির সঙ্গে আত্মীয়: যদিও অনেকে চিনি ছাড়া কফি পান করেন। তবে কফির সঙ্গে কেক, বিস্কুট বা সকালের নাস্তার অনেক পদেই থাকে চিনি। সবমিলিয়ে দেখা যায়, সারা দিনে হয়তো ১১ টেবিল-চামচ চিনি খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের চেষ্টা তখন বিফলে যাবে।
মেজাজের জন্য খারাপ: ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
সন্তান ধারণে অক্ষমতা: দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদি মা হতে চান, তবে অবশ্যই কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। আর গর্ভধারণের পর কফি বাদ দিন। কারণ দৈনিক ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মক্রটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরো দেখুন: গ্রিন টি এর উপকারিতা কি
সুবিধা
খেলাধুলায় উন্নতি: ক্যাফেইন যুক্ত কফি খেলে খেলাধুলায় প্রাণ পাওয়া যায়। যদিও হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ায়, তারপরও কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। তাই যে কোনো খেলার আগে কফি পান শরীরে আনে আলাদা শক্তি।
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপের সময়, ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রমাণ মিলেছে আলঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী পদার্থ ক্যাফেইন।
রোগের ঝুঁকি কমায়: ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন, যে কোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়। সেই সঙ্গে দেখা গেছে কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় কফি।
কলিজার রক্ষাকবচ: অ্যালকোহল সেবন ও স্থূলতা, যকৃতে মেদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ব্যথার পাশাপাশি যকৃতের অতিরিক্ত মেদ থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সময় লিভার বা যকৃতের মেদ কমাতে ক্যাফেইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আনন্দ অনুভূতি: সত্যি বলতে কফির গন্ধই আপনাকে অনেকখানি চাঙা করে দেয়। আর পেটে কফি পড়লে মনের বিষাদভাব কাটতে বেশি সময় লাগে না।
তাইতো বন্ধুদের আড্ডায় এক কাপ কফি সত্যিই দারুণ।