মানব দেহে যেমন রোগের শেষ নেই, তেমনি নিরাময়ের ব্যবস্থাও আছে। প্রকৃতির মাঝেই আছে রোগমুক্তির অনেক উপাদান। কালোজিরা এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে ‘নাইজিলা সাটিভা’ (Nigella sativa)। দুই হাজার বছর ধরে ঔষধ হিসেবে কালোজিরার বীজ ব্যবহৃত হচ্ছে।
এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন। প্রস্রাবসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধি উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক এই কালোজিরা। এর প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ।
এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে এতে। প্রতি গ্রাম কালোজিরায় পুষ্টি উপাদান হলো- প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ।
কালোজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও আছে- নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। পাশাপাশি কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান, যা হাজারো উপকার করে।
কালিজিরার উপকারসমূহ
১. কালোজিরা নিন্ম রক্তচাপকে বৃদ্ধি এবং উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাসের মাধ্যমে শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক সুনিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
২. এটি শ্বসনতন্ত্র, সংবহন এবং ইমিউন সিস্টেম, পেট এবং অন্ত্র, কিডনি এবং এমনকি লিভার সম্পর্কিত রোগের চিকিত্সা করে।
৩. মায়েদের বুকের দুধের প্রবাহ এবং স্থায়ীত্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪. ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা কমিয়ে ডায়াবেটিক আয়ত্তে রাখতে সহায়তা করে।
৫. চুল পড়া বন্ধ করে- কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুলপড়া বন্ধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬. মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালণ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৭. শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি- এটি শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৮. দেহের সাধারণ উন্নতি- নিয়মিত কালোজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
৯. অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১০. মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালো জিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
১১. চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদ চলে যেতে সহায়তা করে।
১২. জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য যথেষ্ট উপকারি।
১৩. এ উপাদানের উপস্থিতির জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না।
১৪. দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে যায়।
১৫. প্রচলিত আছে, কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
আরো দেখুন: মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
কালোজিরায় সতর্কতা
কালোজিরা নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খেতে হয়। অতিরিক্ত খেলে বা ব্যবহার করলে হিতের বিপরীত হতে পারে। কালোজিরা তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা যাবে না। অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেকেই কালোজিরা হজম করতে পারেন না। তবে অভ্যাস করলে ভালো।