‘ডুমুরের ফুল’ না দেখলেও ডুমুর ফল আমরা সবাই দেখেছি। গ্রামের বন-বাদাড়ে দেখেছি। আমাদের চেনা ডুমুর খাবার হিসেবে অনেক জায়গাতেই পরিচিত। আমাদের দেশের রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পার্বত্য এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, সিলেটের মৌলভীবাজার ও টাঙ্গাইলে ডুমুর তুলনামূলক বেশি জন্মে। দেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ডুমুরের গাছ দেখা যায়। কাঁচা ফল অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি অথবা এর ভর্তা উপাদেয়। এ ছাড়া ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুরের ঝোলও রাঁধা হয়।
ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্মরণাতীতকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, গুটিবসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি, সর্দি-কাশি, ফোড়া বা গ্রন্থস্ফীতি (টিউমার) ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় জগডুমুর কার্যকর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অবিনাশ দাশ বলেন, ডুমুরের পুষ্টিগুণ হচ্ছে ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ক্যালরি। এতে তিনটিই আছে। ওষধি গুণ হচ্ছে ডুমুর টিউমার ও অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিবারণে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ডুমুরের ফল সবজি হিসেবে এবং পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডুমুরগাছের পাতা শিং ও মাগুর মাছ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টি উপাদান হচ্ছে প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৮৮ দশমিক ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৬, হজমযোগ্য আঁশ ২ দশমিক ২, খাদ্যশক্তি ৩৭ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক ৩, চর্বি শূন্য দশমিক ২, শর্করা ৭ দশমিক ৬, ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ শূন্য দশমিক শূন্য ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ শূন দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।
ডিকে পাবলিশিংয়ের ‘হিলিং ফুডস’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সতেজ ও শুকনো ডুমুর খাওয়া যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখার পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখে। যাঁরা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এটি দারুণ খাবার।
এতে ফাইবারের উপস্থিতি এই ফলের খাদ্যগুণকে বাড়িয়ে তুলেছে। জেনে নিন ডুমুর শরীরকে কীভাবে ভালো রাখতে সক্ষম।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ডুমুরে আছে প্রচুর দরকারি ফাইবার। এ ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া বা অন্য কোনো রকম পেটের গোলযোগ সহজে হতে দেয় না।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
শরীরে মেদ নিয়ে যাঁরা দুশ্চিন্তা করেন, তাঁদের জন্য ডুমুর উপকারী। এর ফাইবার মেটাবলিজমকে ঠিক রাখে এবং শরীরে অকারণ মেদ জমতে দেয় না।
উচ্চ রক্তচাপ
নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত ডুমুর ফল খেলে আমাদের শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সামঞ্জস্য রক্ষা হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা কম হয়।
আরো দেখুন: আমলকীর উপকারিতা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ডুমুরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ফ্রি র্যাডিকেলস নষ্ট করে। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। শুকনো ডুমুর রক্তের ট্রাইগ্লিসারিডসকে কমায়।
হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে
ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে।
ত্বকের জন্য উপকারী
শুধু খেতে ভালো তা-ই না, ডুমুরের ঔষধি গুণ নিয়েও অনেক প্রশংসা আছে। ডুমুর ফল কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, ফোঁড়া ও চর্মরোগ নিরাময়ে বেশ কাজ দেয়।
Source: prothomalo.com