ড্রাগন ফলের পরিচিতি
ড্রাগন ফলের উদ্ভিদতাত্বিক নাম হায়লোসেরিয়াস আনডেটাস। (এটি পিতায়য়া) নামেও পরিচিত।এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো ড্রাগন গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন ফলের আদি বাড়ি মেক্সিকো, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে এর মহাজাতি হায়লোসিরিয়াস (মিষ্টি পিতায়য়া)। এই ফল মূলত ড্রাগন ফল হিসেবেও অনেক পরিচিত। গনচীনের লোকেরা এটিকে ড্রাগন মুক্তার ফল হিসেবেও চিনে।ভিয়েতনামে (মিষ্টি ড্রাগন ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফল এবং থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক নামেও এটি বেশ পরিচিত। ড্রাগন ফলের (Hylocereus undatus) উৎপত্তিস্থল সেন্ট্রাল আমেরিকায় । ড্রাগন ফল হচ্ছে ভিয়েতনামের জাতীয় ফল। ভিয়েতনামে এ ফলটি সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে । এই ফল ভিবিন্ন রঙের ও হয়ে থাকে তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়ই লাল রঙের গুলো দেখা যায়। সব কিছুরই উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটো বৈশিষ্ট রয়েছে।
তো চলুন এবার জেনে নিই ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে
ড্রাগন ফলের কিছু উপকারিতা
ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও দিন দিন আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ড্রাগন ফল আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফল খেলে অনেক রোগের ঝুঁকি কমে। এবং বেশ কার্যকর। ড্রাগন ফল যে সকল রোগের ঝুঁকি কমায় সে রোগ গুলো হল :
• কোলেস্ট্রোরেল কমায়
• হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
• ওজন কমাতে সাহায্য করে
• ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
• ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
• হজমে সহায়ক
• বয়সের চাপ দূর করতে বেশ ভূমিকা রাখে।
• কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
• রক্ত চলাচল বজায় রাখে।
• চুলপড়া প্রতিরোধ করে।
• কোলেস্ট্রোরেল নিয়ন্ত্রণে
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
আামাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ড্রাগন ফল হৃদপিন্ডকেও সুস্থ রাখতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে। একটি রিসার্চচ দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন মাএ ১ টি করে ড্রাগন ফল খেয়েছে তাদের কোলেস্টেরল মাএা ৪.৪% কমেছে এবং যারা প্রতিদিন ২ করে খেয়েছে তাদেরও অনেকটাই কমেছে ৯.৪% ।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ভাল রাখে এই ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায় ।
ওজন নিয়ন্ত্রণে
ড্রাগন ফল প্রচুর ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ। এটি ওজন বজায় রাখতে বা হ্রাস করতেও সহায়তা করতেও অনেক সহায়তা করে । এই ফলটিতেব ৮০শতাংশই পানি রয়েছে । ড্রাগন হচ্ছে এমন একটি ফল যা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ, যা নিশ্চিত ভাবে আপনার অন্ত্রের গতিবিধিকেও সঠিক নিয়ন্ত্রণ করবে।
ক্যান্সারের প্রতিরোেধে
ড্রাগন ফল ক্যান্সারের সঙ্গে অনেক লড়াই করে। এই ফলটিতে ক্যারোটিন নামক এক উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরে থাকা টিউমারকে ধ্বংস করতে সক্ষম ।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা
বেশি পরিমাণ আঁশ থাকায় ড্রাগন ফল খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণও অনেকেটা স্থিতিশীল হয়ে যায় । নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় ড্রাগন থাকলে ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে । বয়স বাড়ার সাথে সাথেও ক্যান্সার থেকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে খুবই ভূমিকা রাখে এই ড্রাগন ফলটি । গর্ভবতী মায়েরাও খেতে পারে এই দারুন সুস্বাদু ড্রাগন ফল।
হজমে সহায়তা
প্রতিদিনের নিয়েমিত পরিমান হারে ড্রাগন ফল খাওয়া । ড্রাগন ফলে আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি থাকে। যার ফলে পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে । যা বদহজমের জন্য ও অত্যন্ত কার্যকারী।
রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাঃসমস্ত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাই রয়েছে এই ড্রাগন ফলে। বিশেষত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C রয়েছে এই ড্রাগন ফলটিতে । এই ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকভাবে বজায় থাকে। নিয়মিত এই ফলটি খেলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য অনেক ভাল থাকবে।
বয়সের চাপ দূর করতে
বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বককে দৃঢ় রাখতে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়। যা ভিটামিন -সি এর উপস্থিতির কারণে ড্রাগন ফলকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস বলা হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ
একটি পরিপক্ক ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের চারভাগের প্রায় একভাগ। এটা অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণেও অনেক সাহায্য করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা রয়েছে তারা এই ফল খেলে অনেকেটাই উপকার পাবেন।
রক্ত চলাচল সঠিকভাবে বজায় রাখে
সারাবিশ্বের একটি অতি পরিচিত পুষ্টি ঘাটতি হলো আয়রনের ঘাটতি। নারীদের মধ্যে এই সমস্যা অনেকটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। মাংস, মাছ, বাদাম ও ডাল এইসব জাতীয় খাবার থেকে আমরা অধিকাংশ আয়রন গ্রহণ করে থাকি। মাত্র কিছু ফলে উচ্চ এসব ফলের একটি হলো ড্রাগন ফল। ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশেরও বেশি। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন খুব প্রয়োজন, যা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
চুল পড়া রোধ করে
আয়রনের ঘাটতির কারণে চুলপড়া সমস্যাও হতে পারে। আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার অন্যান্য উপসর্গও প্রশমিত করতে পারে, যেমন- অত্যধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশে সমস্যা, মাথাব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো দেখুন: বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
ড্রাগন ফলের কিছু অপকারিতা
আমরা কম বেশি সবাই জানি যে সবকিছুরই সুবিধা এবং অসুবিধা ২ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। ঠিক একই রকম ড্রাগন ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খাওয়া উপকারি ঠিক তেমনি প্রচুর পরিমাণে এই ফল খেলে তার কয়েকটি সাইড এফেক্ট দেখা দেয়। আজকে আমারা জনতে পারব। কিছু বিশেষ ড্রাগন ফলের সাইড এফেক্ট। ড্রাগন ফলে অনেক পুষ্টিকর গুণ আছে – অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অ্যালার্জিও হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমানে ড্রাগন ফল খেলে ডাইরিয়া হতে পারে ড্রাগন ফলে হাইপোটেনশ। যা পরিমানের থেকে বেশি বা অতিরিক্ত খেলে নিম্ন রক্ত চাপ হতে পারে।
১ টি ড্রাগন ফলে ভিটামিন এর পরিমান ভিটামিন সি
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের লাল বা সাদা অংশে রয়েছে ২১ মি.গ্রা.
ভিটামিন সি খনিজ লবণআঁশ থাকে
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ৩ গ্রাম আঁশ থাকে যা দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ও ওমেগা ৯ থাকে।
ফাইবার
একটি ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে