শরীরের বাড়তি মেদ কমানোর একটি সাময়িক খাদ্য অভ্যাস ‘কিটো ডায়েট’। এটি খাদ্য গ্রহণের বিশেষ একধরনের পরিকল্পনা, যেখানে শর্করা কম কিন্তু চর্বি বেশি থাকে।
এই খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিমাণ একেবারে কমিয়ে পরিমাণ মতো প্রোটিন ও চর্বি যোগ করা হয়। এতে খিদে কমে যায়। ফলে শরীরের সঞ্চিত চর্বি ক্ষয় হয়ে অতিরিক্ত ওজন কমে। দেহে শর্করার পরিমাণ কমায় বলে এই খাদ্য পরিকল্পনা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
কিটো ডায়েটে কী করতে হয়?
চাল, আটা, চিনি, আলু, দুধ ও সয়াবিন তেলের তৈরি যেকোনো খাবার তিন/চার সপ্তাহ খাওয়া যাবে না। যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টি, ফাস্টফুড, বাইরের ভাজা-পুড়া, কোল্ড ড্রিংস ইত্যাদি। যেসব ফল স্বাদে মিষ্টি সেগুলোও সাময়িক সময়ের জন্য বাদ দিতে হবে। মোট কথা দুই/তিন সপ্তাহ শরীরকে সুগার ও শর্করা মুক্ত রাখতে হবে।
কী খেতে হবে?
শাক-সবজি, আমিষ ও চর্বি খেতে হবে। সয়াবিন তেলের বদলে সরিষা, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভওয়েল, নারিকেল তেল, ঘি বা মাখন দিয়ে শাক-সবজি আধা সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে। ডিম, মাছ ও মাংশ খেতে হবে। ডিমের কুসুম, মাছ-মাংসের তেল খেতে হবে। আর সব খাবার ৬/৭ ঘণ্টার মধ্যে খেতে হবে। অর্থাৎ সকালের খাবার খেতে হবে ১১/১২ টার দিকে। আর রাতের খাবার খেতে হবে সন্ধ্যায়। পেটকে ১৮ ঘণ্টা খাবার মুক্ত রাখতে হবে। আর দৈনিক ঘণ্টা খানেক হাঁটতে হবে।
কিটো ডায়েটে কীভাবে চর্বি গলে?
বেঁচে থাকার জন্য শরীরে শক্তি লাগবেই। এ জন্য আমাদের ক্ষুধা লাগে এবং খাবার খাই। যে খাবার থেকে বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় সেগুলো খেতে আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার কারণে শরীরে চর্বি জমে। শর্করা ও চিনি না খেলে শরীর বাধ্য হয়ে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে শক্তি সংগ্রহ করবে। কিটো ডায়েটে এভাবেই চর্বি গলিয়ে ওজন ঝরানো হয়।
শরীরের ওজন স্বাভাবিক হলে তখন আর কিটো ডায়েটের দরকার নেই। তখন খাবার খেয়েই শরীরের শক্তি যোগাতে হবে।
শর্করা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে রক্তের গ্লুকোজ কোষে নিয়ে শক্তি তৈরি করা, অতিরিক্ত গ্লুকোজ চর্বিতে পরিণত করা আর জমে থাকা শরীরের চর্বি গলতে বাঁধা দেয়া।
শর্করা ও চিনি জাতীয় খাবার না খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ইনসুলিন কম ক্ষরিত হয় এবং জমে থাকা চর্বি গলতে শুরু করে।
সুগার ও শর্করা না খেলে কী হয়?
অনেকের ধারণা, সুগার ও শর্করা না খেলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কিন্তু আসলেই কী তাই। না একদম পড়বেন না। আপনি শর্করা কমাচ্ছেন কিন্তু বাদ দিচ্ছেন না। কারণ শাক-সবজিতে পরিমাণে অল্প হলেও শর্করা আছে। এছাড়া আছে ফাইবার ও বিভিন্ন ভিটামিন। ভাত না খেলেও প্লেট ভরে তো সবজি খাবেন, তাই না? সঙ্গে খাবেন স্বাস্থ্যকর তেল-চর্বি যা শাক-সবজির ভিটামিনকে শরীরের হজম উপযোগী করে। কিটো ডায়েটে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয় না। গ্লুকোজের উৎস শর্করা ও সুগার না খেলেও শরীরে জমে থাকা চর্বি থেকে সেটা পূরণ হয়। সুতরাং পুষ্টি ঘাটতির ভয় নেই।
কতদিনে কতটুকু ওজন কমে?
শক্তির জন্য খাবার দরকার। এ জন্য শরীরে ক্ষুধার অনুভূতি হয়। খাবার না খেলে ক্ষুধার তীব্রতা বাড়ে। মাথার ঘেলু এটা বুঝে না যে, শরীরে শক্তির উৎস চর্বি জমে আছে। এটা শরীরকে বুঝাইতে হবে। একবার বুঝে গেলে তখন কিটো ডায়েটকারী ব্যক্তির ক্ষুধা লাগবে না। ২৪ ঘণ্টায় একবার খেলেও চলবে। এই ডায়েট শুরুর পর ক্ষুধার অনুভূতি কমে গেলে বুঝতে হবে চর্বি গলা শুরু হয়েছে।
ব্যায়াম করতে হবে কিনা?
অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন ভোরে অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটা ও ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম না করে শুধু খাবারে পরিবর্তন আনলে প্রথম কয়েকদিন কমে কিন্তু এরপর আর কমতে চায় না। ব্যায়াম করলে চর্বি কমা তরান্বিত হয়। ব্যায়ামের সময় এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা শরীরকে দারুণ সুস্থ ও চনমনে রাখে। খালি পেটে ব্যায়াম করলে চর্বি কাটে।
আরো দেখুন: সালাদ রেসিপি
ঘুমের কোনো ব্যাপার আছে কিনা?
জি, রাতে পরিমিত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর ৩/৪ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করতে হবে এবং ঘুম থেকে উঠেই কিছু খাওয়া যাবে না। দেরি করে খেতে হবে।
আবার ওজন বেড়ে যাবে কিনা?
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শর্করা ও চিনি খাওয়া শুরু করলে আবার ওজন বাড়বে। কেননা রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ সর্বদা চর্বিতে পরিণত হয়।
আমাদের শরীরে বাইরের চেয়ে ভেতরে চর্বি জমে বেশি। কোষের চারিধারে চর্বি জমে থাকায় মোটা মানুষের শক্তি কম। উঠতে বসতে নড়তে হাঁপিয়ে ওঠে। এছাড়া লিভার, ফুসফুস, অগ্নাশয়, হার্ট ও রক্তনালীতে চর্বি জমে নানা রোগের সৃষ্টি করে।
একই কারণে হরমোনের ব্যালেন্স থাকে না। যার কারণে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গ্যাস্টিক সমস্যা, হৃদরোগ, থাইরয়েড ইত্যাদি নানান রোগ পেয়ে বসে। অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পারলে চিরদিনের জন্য এসবের ওষুধ খাওয়া লাগবে না।
Source: ekushey-tv.com