শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রনে রাখা, কিডনি ভালো রাখা ইত্যাদি হচ্ছে মেথির উপকারিতা। এছাড়া কিছু অপকারিতাও আছে। এই লেখাটিতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চুলের জন্য ব্যবহার, ডায়বেটিস রোগীদের জন্য পরামর্শ এরকম নানা বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ঠিক তথ্য না জানলে অনেক সময় বিভ্রান্ত হতে হয়। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস মেথির জল খাওয়ার পরামর্শ অনেকেই দিয়ে থাকেন। স্বাদে গন্ধে খাবারকে অতুলনীয় করে তুলতে এর কোন বিকল্প নেই। বলে রাখি এটি কিন্তু কিছুটা তিতা স্বাদের।
ওজন কমাতে মেথির উপকারিতা
মেথি খেলে ক্ষিদের অনুভূতি কমে যায়। এর কারণে আমরা তুলনামূলক কম খাবার খাই, ফলে ক্যালরিও কম গ্রহণ করা হয়। এতে ওজনও কমে। প্রতিদিন সকালে মেথি মেশানো পানি খেতে পারেন। এতে কিছুদিন পরেই দেখতে পাবেন আপনার ওজন বেশ কমে গেছে।
এছাড়া খেতে পারেন অঙ্কুরিত মেথিবীজ। একটি পাত্রে মেথি বীজ রেখে সেটি ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে দিলে ২/৩ দিন পরে বীজ থেকে চারা গজানো শুরু হবে। এই অঙ্কুরিত বীজ খেলে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া ভেজে খেতে পারেন, মধু এবং চা দিয়েও খেতে পারেন।
চুলের জন্য মেথির উপকারিতা
প্রাচীনকালে পুরুষেরাও নারীদের মতো লম্বা চুল রাখতো এবং সেটি তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতো। চলুন চুলের জন্য এর কিছু উপকারিতা দেখে নেই-
চুলের কন্ডিশনার হিসেবে মেথি ভেজানো পানি ব্যবহার করা যায়। চুলে শ্যম্পু করার পরে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখা পানি চুলে লাগালে তা কন্ডিশনারের কাজ করবে।
মেথিতে থাকা লেসিথিন চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়। এতে চুল পড়া কমে, তাতে চুলের ঘনত্ব বাড়ে। ১ চামচ মেথি গুড়ো, ২ চামচ সরিষা দানা গুড়ো আর, ১ চামচ অলিভ ওয়েল হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ১০-১৫ মিনিট চুলে মেখে রেখে দিন। কিছুদিন পরেই ফল পাবেন।
নারকেল তেলে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই তেল মাখলে চুল পাকা রোধ করা যায়
মেথি গুড়ো আর, টকদই মিশিয়ে তা মাথায় মাখলে খুসকি দূর হয়। ছত্রাক খুসকির কারণ, এর এই মিশ্রণ ছত্রাক দূর করে
এছাড়া পড়া দূর করতেও সাহায্য করে। তাই, সকালে মেথি ভেজানো জল খেতে পারেন
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য
ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার মেটাবলিজমের উপর পজিটিভ প্রভাব ফেলে মেথি। তাই, নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের পাশাপাশি যদি মেথি খান আর, ব্যায়াম করেন তাহলে আরো বেশী সুস্থ থাকতে পারবেন।
এছাড়া শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা ডায়াবেটিস রোগীরা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারেন। মেথি খেয়ে যদি আপনি ভেবে থাকেন একটু অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়া যাবে, তাহলে ভুল করবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আপনার কিছুই খাওয়া উচিত হবে না।
মেথির আরো কিছু উপকারিতা
তিন ধরণের উপকারিতার কথা এতক্ষণ বললাম- ওজন কমানো, নানারকম চুলের উপকারিতা, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু সুবিধার কথাও জানলেন। এবারে চলুন আরো কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-
১. শুধু সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই না, মেথি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে
২. লেবু, মধু আর, মেথি মিশিয়ে খান, সাধারণ সর্দি কাশি সেরে যাবে। জরও আপনাকে ছেড়ে পালাবে।
৩. মেথিতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অনেক সময় পেপটিক আলসারও সারিয়ে তোলে
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কৃমিকেও প্রতিরোধ করে
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে মেথি
৬. প্রথম আলোর দেয়া তথ্যমতে- পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়। মাতৃদুগ্ধ বাড়াতেও মেথি সাহায্য করে
মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সব খাবারেরই উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। মেথির অপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নিন-
অতিরিক্ত খেলে বমি বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। এমনকি গায়ে গন্ধও হতে পারে
গর্ভবতী মহিলাদের নানারকম সমস্যা হতে পারে বেশী পরিমাণে মেথি খেলে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক
আগেই বলেছি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, ওষুধের সাথে মেথিও খেলে সুগার লেভেল বেশী কমে যেতে পারে
যাদের রক্ত পাতলা তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নেবেন
মেথি কোন সুস্বাদু খাবার না, এটি সরাসরি খেতে তিতা লাগবে
আরো দেখুন: লিচুর উপকারিতা
মেথি খাওয়ার নিয়ম
গরম পানিতে সামান্য পরিমাণে মেথি নিয়ে ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। তা না হলে খেতে বাজে লাগবে। সারারাত মেথি দানা ভিজিয়ে রেখে সকালে সেকে শুধু পানি পান করুন। কড়াইয়ে ভেজে গুড়ো করে পানির সাথে অল্প পরিমাণে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এছাড়া আরো কিছু উপায়ের কথা উপরে বলেছি, আপনি চাইলে আবারো সেগুলো পড়ে দেখতে পারেন। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, এর প্রচুর উপকারিতা যেমন আছে, কিছু অপকারিতাও আছে। তাই, খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।
Source: lekhok.me