পেস্তা, নাম শুনলেই যেন জিভে জল! সবুজ রং-এর উজ্জ্বল বর্ণের যে বাদামটি পায়েস, সেমাই, কিংবা ক্ষীরের স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, তার নাম কম-বেশি আমরা সকলেই জানি… বাদামটির নাম পেস্তা। কখনও কখনও আইক্রিমের সুমিষ্ট স্বাদ বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। দামে বেশ চড়া হলেও পেস্তার পুষ্টিগুণ নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। পেস্তার উপকারিতা নিয়ে দু-চারটি কথা বলার প্রসঙ্গে আমাদের একবার পেস্তা বাদাম সম্পর্কে কয়েকটি কথা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব।
পেস্তা বাদামের ইতিহাস
রুশ মধ্যপ্রাচ্যবিদ পেট্রোসফস্কি ইরানের সাসানি যুগের ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর লেখা একটি বইতে ইরানে বিচিত্র ফুল ও ফলের গাছের পাশাপাশি বহু রকমের সব্জি চাষের কথাও লিখেছেন। এসব গাছের মধ্যে একটি হল “পেস্তা বাদাম” গাছ। সুদূর অতীতে জনগণ পেস্তার খোসা ফেলে দিয়ে ভেতরের বাদামটিকে ব্যবহার করে একধরণের শক্তিবর্ধক খাবার তৈরি করত। প্রাচীন দলিল দস্তাবেজ এবং ধর্মীয় লেখাতেও এই পেস্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে।
হিজরি তৃতীয় শতকে মুহাম্মাদ বিন জারির তাবারি পেস্তার জন্ম হজরত আদম (আ.) এর সময়েই হয়েছে বলে মনে করতেন।
তিনি লিখেছেন: হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমনের সময় ত্রিশ প্রকারের ফল জমিনে দেয়া হয়েছিল। দশ প্রকারের ফল ছিল চামড়াযুক্ত, দশ প্রকারের ফল ছিল বীজযুক্ত আর দশ প্রকারের ছিল চামড়া এবং বীজহীন। আখরোট, পেস্তা, বাদাম ইত্যাদি ছিল চামড়া বা খোসাযুক্ত ফলের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র তাওরাতেও পেস্তার প্রসঙ্গ আনা হয়েছিল। বলা হয়েছে: ইউসুফ (আ.) এর দরবারে ছেলেদের পাঠানোর সময় হযরত ইয়াকুব (আ.) তাদের বলেছিলেন, ইউসুফের জন্য নিজেদের ভূখণ্ডের পণ্য যেন উপহার হিসেবে নিয়ে যায়।
এই উপহার সামগ্রির মধ্যে পেস্তাও ছিল। সুতরাং, পেস্তার বাদামের ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশিই রয়েছে এর নানারকম উপকারিতা।
পেস্তা বাদামের উপকারীতা
পেস্তাবাদামে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে পেস্তা বাদাম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়ামের দারুণ উত্স রূপে কাজ করে পেস্তা বাদাম।
এদিকে এতে ফ্যাটের পরিমাণ পণ্য বাদামের চাইতে অনেকটাই কম। ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পেস্তা বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর তেল বিশেষভাবে উপকারী।
একটা কথা বলা প্রয়োজন। অন্য সকল বাদামের চাইতে পেস্তায় রয়েছে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোস্টেরল। এতে উপস্থিত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদাম খেলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।
পেস্তা বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
পেস্তাবাদামে লুটেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বয়সের কারণে সৃষ্ট নানা শারীরিক সমস্যা যেমন মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
দাঁতের রোগ ও লিভারের সমস্যায় পেস্তাবাদাম বেশ উপকারী। পেস্তা বাদাম রক্ত শুদ্ধ করে।
প্রোটিনের একটা চমত্কার উত্স হচ্ছে পেস্তা। পেস্তা খাদ্যনালীতে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে পেট পরিষ্কার থাকে।
আরো দেখুন: কাজু বাদামের উপকারিতা
পেস্তা কীভাবে খাবেন
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আগের দিন রাতে দুধে অথবা পানিতে ভিজিয়ে রাখা বাদাম খেতে পারেন।
খালি পেটে খেলে বাদামের পুষ্টিগুণ শরীরে তাড়াতাড়ি হজম হবে। দৈনিক ৬/৭ টা বাদাম খেলেই যথেষ্ট।
লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম বা প্রক্রিয়াজাত করা বাদাম খাবেন না।
বাদামের ওপরের পাতলা খোসাটা ছাড়িয়ে খান। কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারলেই সবচাইতে ভালো। নাহলে ক্ষীর বা মিষ্টি কোন খাবারের সাথে খান। বেটে নিয়ে দুধে মিশিয়েও খেতে পারেন।
Source: today.salamweb.com