ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর উপকারিতা? বর্তমান সময়ে সবাই যেখানে ওয়েট কমানোর জন্য উঠে পরে লেগে থাকে, সেখানে এমনও মানুষ আছেন যারা ওয়েট বাড়াতে চান। জানলে অবাক হবেন, ওয়েট কমানো যেমন কঠিন, ওয়েট বাড়াতে গেলেও যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিদিন নানা রুটিন ফলো করে নানা খাবার বানিয়ে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় তা হয়ে উঠে না।
তাহলে ওয়েট গেইন করার সহজ উপায় কি হতে পারে? ওয়েট গেইন করার জন্য বাজারে এক ধরনের মিল্ক শেক পাওয়া যায়। এই মিল্ক শেক শুধু আপনার ওয়েট বাড়াবে এমন না, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। আসুন জেনে নেই, ওয়েট গেইন মিল্ক শেক কি এবং ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর উপকারিতা।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক কি ?
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এমন একটি পানীয় যা আপনার ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই মিল্ক শেক মূলত তাদের জন্য যারা সাধারন ভাবে ওয়েট গেইন করতে অসুবিধা হয়। ওয়েট গেইন মিল্ক শেক গুলি সাধারনত ক্যালোরি এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ লবন পরিমিত পরিমানে থাকে। তাই শরীরে কোন কিছুর অভাব বোধ হয় না। এই মিল্ক শেক এর কাজ হল ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করে ওজন বৃদ্ধি করা।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর উপকারিতা
পেশীর বৃদ্ধিতে সাহায্য করেঃ প্রোটিনের চাহিদা আমাদের সবার শরীরে কম বেশি থাকে। আমাদের রেগুলার খাবারের ভেতর খুব কমই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকে। ওয়েট কমানো বা বাড়ানো এগুলা ছাড়াও আমাদের শরীরে যেন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। ওয়েট গেইন মিল্ক শেক উচ্চ মানের প্রোটিন দিয়ে ভরপুর যা পেশির বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। তাই ওজন কমানোর কথা চিন্তা করলে ওয়েট গেন মিল্ক শেকটি অবশ্যই আপনার লিস্টে রাখুন।
প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানঃ ওয়েট গেইন মিল্ক শেক সাধারনত ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দিয়ে ভরপুর থাকে। যা সহজেই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ওয়েট গেইন নিশ্চিত করে। অনেকেই ওয়েট গেইন করার সময় এমন অনেক খাবার খান, যেগুলোতে পুষ্টিগুণ একেবারে নেই বললেই চলে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শরীরে পুষ্টির চাহিদা কমে গেলে নানা অসুখ বিসুখ হতে পারে। তাই এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক হতে পারে আপনার নাম্বার ওয়ান চয়েজ।
সহজ এবং সুবিধাজনকঃ যারা প্রতিদিন অফিস বা বাইরে কাজে যান, তাদের জন্য আলাদা সময় বের করা বেশ কষ্টকর। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক থাকে তাহলে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় না। সকালে বা রাতের খাবারের সাথে বা যেকোন সময় স্ন্যাকস হিসাবে খেয়ে নিতে পাড়েন সহজেই। আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের খাবার নিজেরাই প্রস্তুত করেন। তাদের আলাদা করে পুষ্টিকর ও সুষম খাবারের মেনু বানানো আর তা মেনে চলা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এটি বেস্ট সল্যুশন।
সময় বাঁচায়ঃ ওয়েট গেইন করার এই জার্নিতে আপনি হয়ত নানা রেসিপি ফলো করতে চান। ইউটিউব, গুগল ঘেঁটে নতুন নতুন রেসিপি কালেক্ট করে রাখেন সময় পেলে বানিয়ে খাবেন এই ভেবে। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় বেশিরভাগ সময় খাবার গুলো তৈরি করে খাওয়া হয় না। আপনার জন্য কার্যকরী একটি সমাধান ওয়েট গেইন মিল্ক শেক। আপনাকে কষ্ট করে কিছু বানিয়ে খেতে হবে না। আপনার সময় ও শ্রম দুইটাই বাঁচাবে এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক দিনে কয়বার খাওয়া উচিত?
আপনার প্রতিদিন কতবার অয়েট গেইন মিল্ক শেক খাওয়া উচিত তা নির্ভর করবে আপনার ক্যালরির চাহিদা, ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্য, কার্যকলাপের মাত্রা ইত্যাদির উপর। তবে স্বাস্থ্য ঠিক রেখে এই ওয়েট গেইন চ্যালেঞ্জ গুলো নেওয়া উচিত আর তার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন।
দিনে একবার মিল্ক শেকঃ সাধারণভাবে প্রতিদিন একবার এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক খেয়ে আপনার জার্নি শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন স্ন্যাক্স হিসেবে এটি খেলে আপনার বাড়তি কোন রুটিন ফলো করতে হবে না। এটি হতে পারে খাবারের মাঝে, ওয়ার্ক আউটের পরে বা এমন সময়ে যখন আপনার অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং পুষ্টির প্রয়োজন। স্বাদ বাড়ানোর জন্য কোকো পাউডার, ভ্যানিলা এসেন্স, মধু বা সিরাপের মতো উপাদান এড করতে পারেন।
অগ্রগতি খেয়াল করুনঃ আপনার ওজন বৃদ্ধির অগ্রগতি খেয়াল করুন এবং আপনার শরীর কীভাবে রিয়্যাক্ট করছে তার ট্র্যাক রাখুন। আপনি যদি ঠিকঠাক রেজাল্ট দেখতে না পান তবে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সবার শরীরে সব কিছু সমান ভাবে কাজ করে না। কারো শরীরে পুষ্টির চাহিদা কম থাকে, আবার কারো বেশি। সব দিক বিবেচনা করে এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে আশানুরূপ রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
এক্টিভ থাকুনঃ নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থাকুন কেননা ওয়েট বাড়ানো এবং কমানো দুইটার জন্যই শারীরিক পরিশ্রম খুবই জরুরি। সময়ে পেলেই ব্যায়াম করুন, প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটাচলা করুন যেন পেশি সব সময় এক্টিভ থাকে। মনে রাখবেন, এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক গ্রহণ করলেই আপনার ওজন বেড়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ
একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি কারন তিনি আপনার বর্তমান ওজন, উচ্চতা, বয়স, কার্যকলাপের স্তর বিবেচনা করে আপনাকে সব কিছুর নির্দেশনা দিতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে ওজন বাড়ানোর জন্য তারা আপনাকে ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর ঠিকঠাক পরিমান বলে গাইড করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, আপনার গোল হল ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি ওয়েট গেইন মিল্ক শেক অতিরিক্ত গ্রহন করার ফলে খাদ্যে ভারসাম্যহীনতা এবং স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
আরো দেখুন: টক দই এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর দাম কত
লোকাল মার্কেট বা বিভিন্ন অনলাইন পেইজে এক এক রকম দামে বিক্রি হয় ওয়েট গেইন মিল্ক শেক। তবে সাধারনত ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক কোথায় পাওয়া যায়
যেহেতু এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর সাথে সবাই এখনও খুব বেশি পরিচিত না তাই আপনি আশেপাশের সব দোকানে হয়ত এই মিল্ক শেক পাবেন না। তবে যেকোনো বড় মার্কেট বা সুপার শপে আপনি পেয়ে যাবেন এই ওয়েট গেইন মিল্ক শেক। আবার কিছু অনলাইন পেইজ আছে যারা এখন এই মিল্ক শেক সেল করে।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক খাওয়ার ফলে অনেক সময় লিভারের সমস্যা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে। আবার ওয়েট অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট এবং ক্যালোরিও বেড়ে যেতে পারে। তখন নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাবে। তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ ছাড়া কিছু গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
পরিশেষে বলা যায়, যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য ওয়েট গেইন মিল্ক শেক একটি হাতিয়ার হতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, এক ব্যক্তির জন্য যা কাজ করে তা অন্যের জন্য কাজ নাও করতে পারে। যেহেতু সবার শারীরিক চাহিদা এক নয়, তাই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই বলতে পারবেন আপনার জন্য কোনটা কতটুকু খাওয়া উচিত।
Source: technicalcarebd.com